‘ইহুদী-নাসারা’ সম্বোধনটির ব্যবহার যে নেতিবাচক তা মসজিদে গমনকারী প্রায় সকলেই জানেন। বাংলাদেশ মুসলিম অধ্যুষিত বলেই আপনাদের অনেকের বাসায় হয়তো মাঝে মাঝে তাবলীগ জামাতের মানুষ দেখা দেয়, যাঁদের উদ্দেশ্য থাকে ধর্মের বাণী প্রচার — একজন মুসলিমকে ইসলামের আদর্শের পথে টানা।
অনেকে ব্যাপারটিকে ভালো হিসেবে দেখেন, অনেকে দেখেন বিরক্তিকর হিসেবে; আমি দেখি স্বাভাবিক হিসেবে। বিশ্বাস একজনের কাছে থেকে জন্ম নিয়ে তার প্রচার ও শক্তির জোরে একাধিক মানুষের কাছে ছড়িয়ে যায়। এজন্য বাংলাদেশে আজ কোটি কোটি মুসলিম, লাখ লাখ আওয়ামীলীগার।
- নিজের মনের ভাব বা বিশ্বাস প্রকাশের অধিকার মানুষের আছে।
- বিশ্বাস ছড়িয়ে যাওয়ার জন্য প্রচারের দরকার আছে।
- আর মানুষের আছে বিশ্বাস পরিবর্তন, গ্রহণ, বা বর্জন করার অধিকার।
এই তিনটি ব্যাপার খুবই মৌলিক।
নাস্তিক্যবাদ যাঁরা দেখতে পারেন না, তাঁদের অনেকেই নাস্তিকদের মেনে নিলেও নাস্তিক্যবাদের প্রচারে খুবই আপত্তি আছে তাঁদের। তাঁরা ভীত এতে নাস্তিকের সংখ্যা বাড়বে, নাস্তিকরা শক্তিশালী হবে।
বাংলাদেশের মাটি হাজার-হাজার বছরের পুরোনো। ইসলাম অধ্যুষিত হওয়ার আগে এই মাটি ছিলো হিন্দু অধ্যুষিত। আজ আমরা যেই হিন্দুদের সংখ্যালঘু বলি, এক কালে তাঁরাই ছিলেন সংখ্যাগুরু। সে সময় ভিনদেশী ইসলাম প্রচারকগণ যখন এখানে এসেছিলেন তাঁরাই বরং ছিলেন সংখ্যালঘু। তাঁরা তাঁদের নিজেদের বিশ্বাস প্রচার করেছিলেন, মানুষ তাঁদের বিশ্বাস গ্রহণ করা শুরু করেছিলো দলে দলে। এক-দুই জন করে আসা এই ধর্মপ্রচারকদের দল ভারী হচ্ছিলো।
সেদিনও এক প্রকার মানুষ ছিলো যাঁরা ইসলাম দেখতে পারতেন না। মুসলিমদের অনেক মানবিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করে রাখতেন, চাপে রাখতেন। তাঁরা ভীত ছিলেন চাপে না রাখলে একদিন মুসলিমরা শক্তিশালী হবে।
আজ আমরা সবাই জানি সেই চাপ কাজে আসেনি। দাড়ির ওপর কর ধার্য করে মুসলিম জাগরণ ঠেকানো যায়নি। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৯০ শতাংশ আজ মুসলিম।
- কারও কাছে ‘ইহুদী-নাসারা’ নেতিবাচক, কারও কাছে নেতিবাচক হচ্ছে ‘মৌলবাদী’।
- কারও কাছে ‘লীগপন্থী’ নেতিবাচক, কারও কাছে নেতিবাচক হচ্ছে ‘জামাতি’।
প্রথমটির ক্ষেত্র ধর্ম, আর দ্বিতীয়টির ক্ষেত্র রাজনীতি। দু’টোই বিশ্বাস। একটি ধর্মীয়, অপরটি রাজনৈতিক। সবগুলো বিশ্বাস-ই ছড়িয়েছে মানুষের হাত ধরে, প্রচারের মাধ্যমে। আর বিশ্বাসের জের ধরেই এক পক্ষ অপর পক্ষের চোখের বালি।
সামনে নির্বাচন আসছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে দলত্যাগের কিছু ঘটনা বাংলাদেশে ঘটে। সচারচর প্রতিবার আমরা যা দেখি তা হলো, ‘ক’ দল ত্যাগকারী ব্যক্তিকে তাঁর সদ্য যোগদানকৃত ‘খ’ দলের ব্যক্তিবর্গ ফুলের মালা দিয়ে বরণ করেন এবং ‘ক’ দলের ব্যক্তিবর্গ ঐ দল পরিত্যাগকারী ব্যক্তির নামে কুৎসা রটানো শুরু করেন।
আজ একটি মানুষ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলে আপনি সাধুবাদ দেন, আর ইসলাম ত্যাগ করে নাস্তিক হিসেবে নিজেকে প্রকাশ করলে মুর্দাবাদ বলে তাঁকে ঠেকাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তাবলীগ জামাতের ইসলাম প্রচারে আপনার সমস্যা হয় না, কিন্তু নাস্তিক্যবাদের প্রচার ঠেকাতে আপনি ব্লাসফেমি আইন চান।
পরিশেষে, আইন দিয়ে বিশ্বাস নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। নিজের পথ বেছে নেওয়ার অধিকার প্রত্যেকটি মানুষের আছে এবং সেই সাথে আছে বিশ্বাস প্রচারের অধিকার। ঠিক যেমন মুসলিম হিসেবে ইসলাম প্রচারের অধিকার আপনার আছে।
“তাবলীগ জামাতের ইসলাম প্রচারে আপনার সমস্যা হয় না, কিন্তু নাস্তিক্যবাদের প্রচার ঠেকাতে আপনি ব্লাসফেমি আইন চান।” খাসা কথা। তবে কিনা, যারা আইন করে এসব বন্ধ করতে চায়, তারা “ইসলামী দাওয়াত” বুঝে না। তবে যারা ধর্মীয় দাওয়াতে অগ্রসর হোন, তাদের একটা মোটিভ থাকে: “সৎকাজের নির্দেশ, অসৎকাজে বাধা প্রদান” – তারা ধর্মকে সৎ মনে করেন, নাস্তিক্যকে অসৎ মনে করেন। কে কী মনে করলো – সেটা তার ব্যক্তিগত অভিমত, অভিরুচি। আইন চলবে আইনের নিয়মে। আইন, আস্তিকের জন্য যেমন, নাস্তিকের জন্যও তেমনই থাকবে, যদি না সেটা আস্তিকের কিংবা নাস্তিকের আইন হয়। ভালো লিখেছেন।